ডিএনসিসির পশুরহাটে ডিজিটাল লেনদেন, ৮ ঘণ্টায় বর্জ্য অপসারণ
আসন্ন ঈদুল আজহায় ৮ ঘণ্টার মধ্যে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণের ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
মেয়র জানান, ডিএনসিসি অস্থায়ী ৮টি কোরবানির পশুরহাটের আয়োজন ইতোমধ্যে চুড়ান্ত হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে আরও একটি হাট চূড়ান্ত হবে। ডিএনসিসির নয়টি অস্থায়ী হাট এবং গাবতলী স্থায়ী হাটের বাইরে কোনো হাট ডিএনসিসি এলাকায় থাকবে না। এর মধ্যে ৮টি হাটে লেনদেন ক্যাশলেস বা ডিজিটাল পদ্ধতিতে করার সুযোগ থাকবে।
সম্পর্কিত খবর
সোমবার (১৯ জুন) দুপুরে বনানীর হোটেল শেরাটনে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ স্মার্ট হাট’ শিরোনামে ডিএনসিসির কোরবানির পশুরহাটে ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেন ব্যবস্থা বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে মেয়র এ সব তথ্য জানান।
মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি যখন মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছি, তখন কোরবানির বর্জ্য অপসারণ হতো ৪৮ ঘণ্টায়। পরের বছর থেকে কোরবানির বর্জ্য অপসরণ শেষ করেছি ২৪ ঘণ্টায। গত কোরবানির ঈদে ডিএনসিসি এলাকার বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে ১২ ঘণ্টায়।’
এই ঈদে সবার চেষ্টায় উত্তর সিটি করপোরেশন ৮ ঘণ্টার মধ্যে কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করা হবে। কোরবানির বর্জ্য অপসারণে নিয়োজিত কর্মকর্তা, কর্মচারীদের পাশাপাশি তিনি নিজেও মাঠে থাকবেন বলেও জানান ডিএনসিসি মেয়র।
মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘কোরবানির বর্জ্য অপসারণের সঙ্গে জড়িত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি বর্জ্য অপসারণ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য তদারকি টিম ও কমিটি গঠন করা হয়েছে। এবার কোরবানির বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমে আমাদের ১১ হাজার কর্মী মাঠে থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘যারা কোরবানি করবেন, সেসব নাগরিকদের জন্য ৯ লাখ বায়োডিগ্রেডেবল (পরিবেশবান্ধব) পলিব্যাগ আমরা বিতরণ করবো। এই পলিব্যাগে কোরবানির বর্জ্য ঢুকিয়ে আপনারা রেখে দেবেন। সেগুলো আমাদের লোকজন সংগ্রহ করে নেবে। তবে সবার প্রতি অনুরোধ, এসব পলিব্যাগে ময়লা না ঢুকিয়ে আপনারা মাংস ভরে ফ্রিজে রাখবেন না। এগুলো বিশেষভাবে বর্জ্য অপসারণের জন্য আমরা তৈরি করেছি।’
মেয়র বলেন, ‘ডিএনসিসির অস্থায়ী ৯টি কোরবানির পশুরহাট এবং গাবতলী স্থায়ী হাট এই ১০ টর বাইরে আর কোনো হাট ডিএনসিসি এলাকায় থাকবে না। এর বাইরে কোথাও যদি রাস্তা দখল করে হাট বসানো হয় হলে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ করবো- এসব হাটের বিরুদ্ধে আপনারা ব্যবস্থা নিন। অনুমোদন ছাড়া কোথাও যেন হাট বসতে না পারে।’
ডিএনসিসির স্মার্ট হাট স্মার্ট লেনদেন প্রসঙ্গে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট হাট’ স্লোগানে ডিএনসিসির ৮টি কোরবানির অস্থায়ী পশুরহাটে ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেন ব্যবস্থা থাকবে, আর এই হাটগুলো হবে স্মার্ট হাট। আমরা ধীরে ধীরে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে যাচ্ছি। এরই অংশ হিসেবে সব লেনদেন হবে স্মার্টলি। তেমনি কোরবানির পশুরহাটে আমরা ক্যাশলেস লেনদেন করতে পারব। ইতোমধ্যে ১০ হাজার খামারির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে এই লেনদেনের জন্য। সেক্ষেত্রে টাকা নিয়ে আমাদের আর হাটে যেতে হবে না, গরুর মালিকরাও টাকা নিয়ে বাড়ির ফেরার সময় সমস্যায় পড়বে না। কারণ সব লেনদেন হবে ডিজিটালি।’’
তিনি বলেন, ‘কোরবানির পশুরহাটে ডিজিটাল লেনদেন চালুকরণ এবং প্রান্তিক পশু বিক্রেতাদের ব্যক্তিক রিটেইল হিসাবের মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে ২০২২ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক এই উদ্যোগের পাইলট কার্যক্রম গ্রহণ করে, যেখানে ৩৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়। এবার আমাদের লেনদেন টার্গেট দেড়শত কোটি টাকা।’
ডিএনসিসির আওতাধীন কোরবানির অস্থায়ী পশুরহাটগুলোর মধ্যে যে ৮টি হাট স্মার্ট হাট হিসেবে ডিজিটালি লেনদেন হবে, এগুলোর মধ্যে রয়েছে- উত্তরা দিয়াবাড়ি ১৬ ও ১৮ সেক্টরসংলগ্ন বউ বাজার এলাকার খালি জায়গা, ভাটারা (সাইদ নগর) সংলগ্ন খালি জায়গা, কাওলা শিয়াল ডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা, বাড্ডা ইস্টার্ণ হাউজিং আফতাব নগরস্থিত ব্লক-ই, এফ, জি, এইচ পর্যন্ত (যা সাবেক বাড্ডা ইউনিয়ন পরিষদের অংশ), মোহাম্মদপুর বছিলাস্থ ৪০ ফুট রাস্তা সংলগ্ন খালি জায়গা, মিরপুর গাবতলী পশুর হাট, মিরপুর সেকশন-৬, ওয়ার্ড নং-৬ (ইস্টার্ন হাউজিং) এর খালি জায়গা এবং ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর খেলার মাঠের খালি জায়গায় বসা হাট।
ডিএনসিসি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সার্বিক সহায়তায় তৃণমূল পর্যায়ে পশু বিক্রেতাদের আর্থিক পরিসেবার আওতায় আনতে এবং সাধারণ ক্রেতাদের সর্বপর্যায়ে ডিজিটাল লেনদেনের সুযোগ সৃষ্টিতে কোরবানির পশুহাটে ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেন (বিশেষত বাংলা কিউআর) প্রসারের এই কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
ডিএনসিসির পশুর হাটে যে ১০টি ব্যাংকের মাধ্যমে ডিজিটাল লেনদেন করা হবে, সেগুলো হচ্ছে- এবি ব্যাংক লিমিটেড, ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড, ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, মিচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, পূবালী ব্যাংক লিমিটেড, দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেড এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি।
এছাড়াও থাকবে ৩টি আন্তর্জাতিক পেমেন্ট স্কিম (এমেক্স, মাস্টারকার্ড ও ভিসাকার্ড)। ৪টি এমএফএস প্রোভাইডার (বিকাশ, নগদ, উপায় ও এমক্যাশ) ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেন কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ ঢাকা উত্তর সিটির ৮টি হাটে ডিজিটাল বুথ স্থাপন করে অর্থ তাৎক্ষণিকভাবে ক্রেতার হিসাব হতে বিক্রেতার হিসেবে পৌঁছে দেবে এবং লেনদেনে নগদ অর্থের ব্যবহার হ্রাসকল্পে কাজ করবে। এতে করে নগদ অর্থ লেনদেনের ঝুঁকি হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি লেনদেনকারীদের ডিজিটাল রেকর্ড সৃষ্টি হবে। সৃষ্ট রেকর্ড পশু বিক্রেতাদের ভবিষ্যতে সহজ শর্তে ঋণপ্রাপ্তিসহ বিভিন্ন সেবা ও সহায়তা গ্রহণে সহায়তা করবে।
মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নৃপেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ, বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক শাহ জিয়াউল হক, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সেলিম আরএফ হুসাইন, বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন এর চেয়ারম্যান মো. ইমরান হোসেন প্রমুখ।
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসআর